আলোচিত

হবিগঞ্জে ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা প্রকৌশলীকে আটক!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে আটক করেছেন বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী হরিপদ দাসকে মারপিট ও অশ্লীল গালিগালাজের দায়ে ইউএনও মো. জসীম উদ্দিনের নির্দেশে তার অফিস থেকে আটক করে ইউএনও অফিসে নিয়ে আসে পুলিশ।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। আটকের দুই ঘণ্টা পর মুচলেকার মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের স্টাফ হরিপদ দাস অফিসিয়াল কাজে প্রকৌশলীর অফিসে যান। একপর্যায়ে হরিপদ দাসকে প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। বিষয়টি তিনি স্টাফদের জানান। পরে স্টাফরা ইউএনও মো. জসীম উদ্দিনকের জানান। তিনি পুলিশ ডেকে অফিস কক্ষ থেকে প্রকৌশলীকে আটক করে ইউএনও অফিসে নিয়ে যান।

সেখানে মোবাইল কোর্ট বসালে প্রকৌশল অফিসের প্রায় সব স্টাফই গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বেআইনি আচরণ ও অমানবিক কর্মকাণ্ডের লিখিত জবানবন্দি দেন।

গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার ওয়াহিদুল ইসলাম, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হোসেন শাহ, স্টাফ জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশল অফিসের হিসাবরক্ষক মীর মাহবুবুল হক, শরীফুল হক, আব্দুল মান্নান খান, এসও ফিস, এমএলএসএস জাহাঙ্গীর আলম, এসএম সানোয়ার হোসেন।

তাদের জবানবন্দি শেষে প্রকৌশলীর জবানবন্দি নেয়ার প্রাক্কালে বাহুবল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল হাইয়ের মধ্যস্থতায় অবশেষে মুচলেকায় মুক্তি দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নিজ অফিসের স্টাফদের সঙ্গে বেআইনি অমার্জিত আচরণ তথা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, লঘু ত্রুটিতে বেতন কর্তন, প্রতিদিনই ১-২টায় অফিসে আসা, জরুরি কাজে ফোনে না পাওয়া, নেশাগ্রহণ, নামাজি স্টাফদের নামাজ আদায়ে বাধা ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়।

প্রকৌশলীর চলমান আচরণে সেবাগ্রহীতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এদিকে ইউএনও অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তার আচরণের দায়ে অনুতপ্ত হয়ে মুচলেকায় মুক্তি দেয়া হয়।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্টাফরা জানান, টাকা না দিলে কোনো ফাইলেই তিনি স্বাক্ষর করেন না। টাকা দিলেই তিনি মাতালের মতো স্বাক্ষর করতে থাকেন। তারা বলেন, তিনি ২-৩টায় উপজেলা পরিষদে গাড়ি নিয়ে ঢুকেন। তখন তার চোখ দুটি লাল হয়ে থাকে, দেখলে ভয় করে।

শুধু তাই নয়, প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলার ঠিকাদারদের অভিযোগ।

জেলা ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক অভিযোগ করে বলেন, বাহুবলে যোগদানের পর থেকেই ঠিকাদারদের কাছে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করে আসছেন প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার দাবি পূরণ না হলে ঠিকাদারদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন তিনি।

তিনি বলেন, তিনি একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। একজন সরকারি দায়িত্বশীল ব্যক্তি হয়ে তিনি ইয়াবা ও মদ সেবন করে দিনের বেলা অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন এবং রাতের বেলা মাতাল অবস্থায় প্রকল্প পরিদর্শন করেন। জরুরি প্রয়োজনে দিনের বেলা তাকে কখনোই সাক্ষাতে কিংবা মোবাইল ফোনেও পাওয়া যায় না। তার আচার-ব্যবহারও অরুচিশীল।

সম্প্রতি এ নিয়ে ঠিকাদাররা একটি প্রতিবাদ সভাও করেন তারা। এ সময় বক্তারা প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে অনতিবিলম্বে বাহুবল থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। অন্যথায় সাধারণ ঠিকাদাররা বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচির হুমকি দেয়। এছাড়াও গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত সব কর্মকর্তা কর্মচারী প্রকৌশলীর অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন হবিগঞ্জ এলজিইডির ঠিকাদাররা।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button